মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী প্রগতিবাদের সাময়িক বাধা
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি বলেছেন, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বাংলাদেশের প্রগতিবাদী অগ্রযাত্রায় সাময়িক বাধা সৃষ্টি করতে পারে বটে, শেষ বিচারে অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশই বিজয়ীর পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকবে। সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী অপশক্তি সব সময়ই থাকবে। তবে তারা কোনোদিনই রাষ্ট্র পরিচালনায় আসতে পারবে না। এদেশের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতা। গত ৩০০ বছরে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, ওই শক্তি বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা সব সময়ই শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। গত ২০ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে নূহ-উল-আলম লেনিনের ‘বাঙালি সমাজ ও সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদ’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, নূহ-উল-আলম লেনিনের গবেষণাগ্রন্থ আমাদের সমাজে ও সাহিত্যে মৌলবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতার উৎস অনুসন্ধানে যেমন সহায়ক হবে তেমনি আমাদের এই বার্তাও দেবে যে, আবহমানকাল ধরে আমরা এই দুই ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করে যেভাবে এগিয়ে গেছি ভবিষ্যতেও তেমনি একটি আধুনিক-ধর্মনিরপেক্ষ সময়ের দিকে এগিয়ে যাব।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বইটি নিয়ে আলোচনা করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও গবেষক মোহাম্মদ জমির, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আফসার আহমদ। বইটির লেখক নূহ-উল-আলম লেনিনের অনুভূতি ব্যক্ত ছাড়াও স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। মকবুল হোসেনের কণ্ঠে ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ উদ্বোধনী সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই আয়োজন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অজয় রায়, জাতীয় জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এম আজিজুর রহমান, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদ, ড. সোনিয়া নিশাত আমিন, কবি অসীম সাহা, কবি জাহিদুল হক, কবি নাসির আহমেদ এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষকসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ।
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, একাধিক ধর্ম কীভাবে মৌলবাদ সৃষ্টি করেছে তা তিনি ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছেন। তবে এসব বিষয়ে শেষ বলে কিছু বলার নেই। এ নিয়ে নানা মুনীর নানা মত চলতেই থাকবে। নিজের অনুভূতি প্রকাশকালে নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদ মানবসভ্যতার একটি পুরনো ব্যাধি। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা আমাদের অগ্রগতির প্রধান অন্তরায়। তিনি মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ-বিরোধী আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহাসিকতাপূর্ণ নেতৃত্ব তার এই গবেষণার মূল প্রেরণা বলে উল্লেখ করেন। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ৫টি ধর্মে কীভাবে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি হয়েছে সেটি লেনিন এই বইয়ে দেখিয়েছেন। বইটিতে জামাতের সাম্প্রদায়িকতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিএনপির প্রসঙ্গটি সেখানে আসেনি। কিন্তু বিএনপি-জামাত আসলে যে অভিন্ন এটা অনেকে বলতে চায় না। শামসুজ্জামান খান বলেন, সাম্প্রতিককালে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের যে উত্থান হয়েছে তা অশিক্ষা ও কুশিক্ষার ফল। এই সময়ে এ ধরনের একটি বইয়ের প্রকাশনা খুব জরুরি ছিল। এ ধরনের বইয়ের সাথে পাঠক পরিচিত হলে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ কমে আসবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আফসার আহমেদ বলেন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে নূহ-উল-আলমের এই গবেষণা বাংলা সাহিত্যে অনন্য। এ ধরনের সামগ্রিক মৌলিক কাজ অতীতে আর হয়নি। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘বাঙালি সমাজ ও সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদ’ বইটি মূলত নূহ-উল-আলম লেনিনের পিএইচডি গবেষণার অভিসৌন্দর্ভ। সম্প্রতি প্রকাশিত এই বইটির মূল্য ৪৫০ টাকা।