মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক আর নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মুহাম্মদ ছায়েদুল হক আর নেই। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে মৃত্যু হয়েছে তার। ছায়েদুল হকের বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তার ছেলে রায়হানুল হক ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রভাষক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছায়েদুল হক। ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার সরকারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান প্রবীণ এই নেতা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় জানানো হয়েছে, প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন মন্ত্রী ছায়েদুল হক। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তার মৃত্যু হয়।
বিএসএমএমইউর পরিচালক আবদুল্লাহ আল হারুণ বলেন, গত অক্টোবর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মন্ত্রী ছায়েদুল হক। একদিন আগেই হাসপাতালে গিয়ে তাকে দেখে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
ছায়েদুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করল। দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকাশে তার অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রপতি প্রয়াত ছায়েদুল হকের বিদেহি আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।
নিজের মন্ত্রিসভার সদস্য ছায়েদুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিশ ফাউন্ডেশন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে। মৃত্যুর খবর পেয়ে সকালে বিএসএমএমইউতে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
প্রয়াত নেতাকে ‘সৎ রাজনীতির প্রতিভূ’ অভিহিত করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। এদেশে অনেকে ‘পাওয়ার’ পেলে তার অপব্যবহার করে, কিন্তু ‘পাওয়ার’ পেয়েও তাকে দুর্নীতি স্পর্শ করতে পারেনি। তার মতো সৎ মানুষ বিরল।
বেলা ১১টার দিকে ছায়েদুল হকের মরদেহ মিন্টো রোডের মন্ত্রিপাড়ায় তার সরকারি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হবে হাসপাতালের হিমঘরে।
ওবায়দুল কাদের জানান, রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ছায়েদুল হকের মরদেহ নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ও দলের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে প্রথম জানাজা হবে। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে মরদেহ। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হবে।
চট্টগ্রামের প্রবীণ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর একদিনের ব্যবধানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্ষীয়ান নেতা ছায়েদুল হককে হারাল আওয়ামী লীগ। ছায়েদুল হকের জন্ম ১৯৪২ সালের ৪ মার্চ; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলাধীন পূর্বভাগ গ্রামে মেহের চান্দ বিবি ও মোহাম্মদ সুন্দর আলীর ঘরে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি নেওয়ার পর এলএলবি পাস করে আইন পেশায় নিজেকে যুক্ত করেছিলেন তিনি। তার আগে ১৯৬৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন ছায়েদুল হক। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার পর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ভারতের ত্রিপুরার লেম্বুছড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদের উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ছায়েদুল হক।
১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছায়েদুল হক। এরপর দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। বিভিন্ন সংসদে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ছায়েদুল হক।
ছায়েদুল হকের দায়িত্ব পালনের সময়ই মৎস্য ও ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ স্থানে উঠে আসে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতেও তার অবদানের কথা স্মরণ করছে মন্ত্রণালয়।
নিজের নির্বাচিত এলাকা নাসিরনগরে গত বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ছায়েদুল হককে।