প্রতিবেদন

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ : অর্জিত সাফল্য

মৎস্য
ক্স  নতুন জলমহাল নীতিমালা, মৎস্য হ্যাচারি আইন ও বিধিমালা, মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় চিংড়ি নীতিমালা ২০১৪ প্রণীত হয়েছে। প্রকৃত চিংড়ি চাষিদের সহায়তার জন্য ঘের প্রাপ্তি, চিংড়ি প্লট নবায়ন এবং ইজারা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
ক্স প্রাকৃতিক জলাশয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, মাছের আবাসস্থল উন্নয়ন, অভয়াশ্রম স্থাপন, জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশবান্ধব ও উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর মৎস্য চাষ ব্যবস্থাপনা ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৫ লাখ ৪৮ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। যা আগে ছিল ২৭ লাখ মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে চতুর্থ এবং অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে আমাদের অবস্থান পঞ্চম। মৎস্য সেক্টরে গত সাড়ে ছয় বছরে মৎস্যচাষি ও মৎস্যজীবীদের আয় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
ক্স  প্রথমবারের মতো জেলেদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদানের কাজ এখন সফল সমাপ্তির পথে। এ পর্যন্ত সারাদেশের প্রায় ১৪ লাখ জেলেকে নিবন্ধন করা হয়েছে।
ক্স  ঢাকার অদূরে সাভারে ১টি, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ২টি সর্বাধুনিক মাননিয়ন্ত্রণ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। চাষিদের রোগমুক্ত চিংড়ি পোনা সরবরাহের জন্য কক্সবাজার, সাতক্ষীরা ও খুলনায় ৩টি পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে চিংড়ি, মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে গত ছয় বছরে ২৫ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা অর্জিত হয়েছে।
ক্স  মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা নিধন রোধে প্রতিবছর জাটকা আহরণে বিরত জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। গত ছয় বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ২ হাজার ১০২টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৩৫ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হচ্ছে। জেলেদের জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি আয়বর্ধক বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ ও কর্ম-উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে ইলিশের উৎপাদন গত ছয় বছরে ৮৬ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়ে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন পৌঁছেছে। মাছ ধরার সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহত জেলে পরিবারের পুনর্বাসনে গত তিন বছরে ২৪৭ জেলে পরিবারকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।
ক্স  আমরা ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্য পুনরুদ্ধার করেছি। মধুমতি ও গড়াই নদী খননের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি ও লবণাক্ততা হ্রাস পেয়েছে। সুন্দরবনসহ আশপাশের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাচ্ছে। মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ
ক্স  ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ২৭ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা (১ দশমিক ৭৮ শতাংশ) ও প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। দেশের লাখ লাখ বেকার যুবক, যুব মহিলা, ভূমিহীন ও প্রান্তিক কৃষক কর্তৃক পশুপাখি পালনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষভাবে এবং প্রায় ৫০ শতাংশ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদের ওপর নির্ভরশীল।
ক্স  ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দুধ ও মাংসের উৎপাদন বেড়ে যথাক্রমে ৬০ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ও ৪৫ লাখ টন উন্নীত হয়েছে। উৎপাদিত ডিমের সংখ্যা ১ হাজার ১৬ কোটি।
ক্স  গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ‘টিকা উৎপাদন প্রযুক্তি আধুনিকায়ন ও গবেষণার সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ১৭ কোটি ৭০ লাখ মাত্রা টিকা বিতরণ করা হয়েছে। যা গবাদি পশুপাখির রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
ক্স  ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ৬ কোটি ২৭ লাখ গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগিকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ৩৮ লাখ ২৩ হাজার মাত্রা উন্নত জাতের সিমেন উৎপাদন করা হয়েছে। উৎপাদিত সিমেন ব্যবহার করে সারাদেশে ২৯ লাখ ৭৩ হাজার প্রজননক্ষম গাভীকে ৩ হাজার ৬৯৩টি কৃত্রিম প্রজনন উপকেন্দ্র/পয়েন্টের মাধ্যমে কৃত্রিম প্রজননসেবা প্রদান করা হয়েছে।
ক্স  ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মোট ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প, একটি কর্মসূচি ও রাজস্ব বাজেটের আওতায় প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন বৃদ্ধি, আত্মকমংসংস্থান সৃষ্টি ও দারিদ্র্য হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *