বঙ্গবন্ধু শুধু একটি নামমুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা

রুপালী টেবিল ডায়রী – ২৬শে মার্চ ১৯৭১

২৬শে মার্চ ১৯৭১। ডায়রীর নাম ইংরেজীতে লেখা রুপালী টেবল ডায়রী। ডিসট্রিবিউটর হিসাবে লেখা আছে শেখ ব্রাদার্স, আর আগের বানানের ঢাকা। ফোন নম্বর ২৫০১০১। দাম লেখা আছে ৮টাকা। আমার বাবার ডায়রী। ব্যক্তিগত অনেক বিষয় রয়েছে, সেগুলো আমাকে পড়তে দিতে চাননি। আমি পড়বো না এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে এসেছি।

ডায়রীটিতে যেসমস্ত তথ্য রয়েছে সবকিছুই আমার কাছে নতুন মনে হচ্ছে। বাবার লেখা ছাড়াও ডায়রীতে যেসমস্ত রেডি তথ্য ছাপা আছে তাও মজার। যেমন পার্সোনাল মেমোরেন্ডা নামে প্রথমেই একটা চাপ্টার আছে। যেখানে লিখতে হয় ব্যক্তিগত সব তথ্যাবলী। সেখানের ফিল্ডগুলাও মজার। তার মধ্যে একটা হচ্ছে ফায়ার পলিসি নং! মানে ঐসময়ে আগুণের জন্য উন্সুরেন্স ছিল!

আজকে আমি ২৬ শে মার্চে তিনি কি লিখেছেন সেটা তুলে ধরতে চাই। উনি তখন বরিশালের বৈদ্যপাড়ায় ছিলেন। রাত্র ৯/১০টায় এই ডায়রী লিখেছেন।

“আজ জাতীয় ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। পশ্চিম পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সাথে পূর্ব পাক সৈন্য, পুলিশ ও জনতার যুদ্ধ শুরু হলো আজ। এর আগে ছোটখাট সংঘর্ষ হলেও আজকের মত এরূপ আর হয়নি। পাকিস্থানের ইতিহাস বদলে যাচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, রংপুর, রাজশাহী ইত্যাদি জায়গায় জনতা এবং পুলিশ ও ইপিআর পশ্চিম পাকিস্থানী সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। লাখ লাখ লোক আহত ও নিহত হচ্ছে। সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে ঢাকা বেতার কেন্দ্র দখল করেছে। সামরিক আইনের পুনঃপ্রবর্তন হল। সকল রাজনৈতিক কার্যাবলী অবৈধ ঘোষণা করা হল। আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসাবে অবৈধ ঘোষণা করা হল। রাত আটটায় প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে শেখ মুজিব ও তার অনুসারীদের প্রকাশ্যে দেশের শত্রু বলে অভিহিত করেছেন। অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ইয়াহিয়া তার ভাষণ শেষ করেছেন। চিটাগং বেতার কেন্দ্র পশ্চিমা সৈন্যরা দখল করতে পারেননি। শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে তা প্রচার করা হলো। প্রতিটি লোকের মুখে একই কথা।”

২৬শে মার্চের ডায়ারী পড়ার পরে আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি কি রেডিওতে শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণা শুনেছো? শেখ মুজিব কি নিজের মুখে ঘোষণা দিয়েছেন?

অবশ্যই শুনেছি। শেখ মুজিবের ঘোষণা অনেকেই তখন পাঠ করেছে। মুজিব তো তখন আটক!

জিয়া তাহলে কি করেছে?

ঐ সময়ে যারাই ঘোষণা পাঠ করেছে সবাই যে শেখ মুজিবের ঘোষণাই পড়ছে এইটা তাদের আর বুঝাইতে হয় নাই। পাঠকরা সবাই শেখ মুজিবের নাম লইয়াই পড়ছে। দেশের কোন মানুষই তখন পাঠকদের ব্যাপারে উৎসাহী নয়। তারা শেখ মুজিবের স্বাধীণতা ঘোষণা নিয়াই উত্তেজিত ছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *