‘রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মিয়ানমার দোষী সাব্যস্ত’
উত্তরণ প্রতিবেদনঃ রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে মিয়ানমার সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্থায়ী গণ-আদালত গত ২২ সেপ্টেম্বর এই প্রতীকী রায় ঘোষণা করেছে। একই সাথে মিয়ানমারে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে অবিলম্বে দেশটির ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি, মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিদেশে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দ, মিয়ানমারের বাইরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি-সহ মোট ১৭-দফা সুপারিশ করেছেন এই আদালত। মালয়েশিয়াভিত্তিক দ্য স্টার অনলাইনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
২২ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্তে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত সাত সদস্যের বিচারক প্যানেল এই রায় ঘোষণা করেন। তারা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, কাচিন ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০০ নির্যাতিত মানুষের সাক্ষ্য, ডকুমেন্টারি এবং বিশেষজ্ঞ মতামত পর্যালোচনা করে এই রায় ঘোষণা করেছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ইন্টারন্যাশনাল পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালে এই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে গঠন করা এই ট্রাইব্যুনালে গত পাঁচ দিন ধরে টানা শুনানি চলে। প্রধান বিচারক ড্যানিয়েল ফিয়েরেস্টেইন এই রায় পড়ে শোনান। যিনি আর্জেন্টিনার সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা। ফিয়েরেস্টেইন বলেন, মিয়ানমার সরকার গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীকে কাচিন ও মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। অন্য বিচারকরা হলেনÑ মালয়েশিয়ার জুলাইহা ইসমাইল, কম্বোডিয়ার আইনবিদ হেলেন জার্ভিস, অস্ট্রেলিয়ার সিডনির মেকুইয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক প্রধান জিল এইচ বোয়েরিঙ্গার, ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী নুরসিয়াবানি কাতজাসুংকানা, ইরানের মানবাধিকার আইনজীবী সাদি সদর ও ইতালির সুপ্রিমকোর্ট অব ক্যাসেসনের বর্তমান সলিসিটর জেনারেল নিলো রেসি।
বিচারক গিল এইচ বোয়েরিঙ্গার কয়েকটি সুপারিশ ঘোষণা করেন। এর মধ্যে মিয়ানমারকে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা, কাচিন ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার তথ্য জানতে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান দলকে অবশ্যই সে দেশে ভিসা এবং সহজে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, নিপীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার ও নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক বিলোপ করে মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই সংবিধান সংশোধন করতে হবে।