শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই গণতন্ত্র উন্নয়ন বঙ্গবন্ধু হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হয়েছে
‘সে সময় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা যদি দেশে না ফিরতেন, তা হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো না। আজকে শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী না থাকতেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্ভব হতো না।’
উত্তরণ প্রতিবেদনঃ ‘বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছেন বলেই দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও দ- কার্যকর হচ্ছে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। তবে পরাজিত শক্তির দোসররা এখনও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। যারা ষড়যন্ত্র করছে তারা একদিন দেশ থেকে বিতাড়িত হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে দেশবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ প্রস্তুত রয়েছে।’ গত ১৭ মে বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৫তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় দলের সিনিয়র নেতারা আরও বলেন, বিধ্বস্ত দেশ থেকে এখন বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। নেতৃবৃন্দ বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বাংলাদেশকে পরিপূর্ণতা দিয়েছিলেন। গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি দেশে না ফিরলে এদেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটত না।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান প্রমুখ। দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ এমপি ও অসীম কুমার উকিল সভা পরিচালনা করেন। এ সময় মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতার হত্যাকে সমগ্র জাতির আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা উল্লেখ করে আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, একইভাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন শুধু একজন ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন নয়, একটি জাতির প্রত্যাবর্তন। তিনি দেশে ফিরে দেশকে পূর্ণতা দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে বলেছিলেন, আপনারাই আমার আপনজন। আমি নেত্রী হতে আসিনিÑ দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এসেছি। তিনি প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছেন জাতির কল্যাণে। সমুদ্র সীমানায় কোনো অধিকার ছিল না। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী তিনি সমুদ্রে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার নেতৃত্বে দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু নানা রকমের ষড়যন্ত্র চলছে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। সে সময় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আজকে তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী। শেখ হাসিনা যদি দেশে না ফিরতেন, তা হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো না। আজকে শেখ হাসিনা যদি প্রধানমন্ত্রী না থাকতেন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্ভব হতো না।
আজকে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিএনপি নেতারা ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের সাথে বৈঠক করছেন। তারা কঠিন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
শেখ হাসিনা দেশে না ফিরলে এদেশের মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মারা যেত উল্লেখ করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি বলেন, শেখ হাসিনা কঠিন হস্তে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ নির্মূল করছেন; কিন্তু স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির দোসররা এখন ষড়যন্ত্র-চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন। যারা ষড়যন্ত্র করছে, তারা একদিন দেশ থেকে বিতাড়িত হবে। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনকেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না দিতে নিষেধ করছেন। আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ নিয়ে নাক গলাবো না। বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশ কারও কাছে মাথানত করে না। বঙ্গবন্ধুও কারও কাছে মাথানত করেন নি, শেখ হাসিনাও করবেন না।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার সময় তাকে বলা হয়েছিল, তিনি ভারত হয়ে ফিরলে তাকে ‘ভারতের চর’ বলা হতে পারে। তিনি সেটি উপেক্ষা করেই ভারত হয়ে ফিরেছিলেন। একটি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে দেশে ফিরে তিনি দেশের হাল ধরেছিলেন। আজ দেখুন, দেশের কী অবস্থা! কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফেরার কারণেই আজ সহযোগিতা দেওয়ার নামে বাংলাদেশকে হুমকি-ধমকি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার নেতৃত্বেই দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এটি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আরও কী কী সমস্যা আছে, খুঁজে বের করে সমাধান করতে হবে। আবেদ খান বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে জাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি দেশে না ফিরলে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হতো না।
সভায় শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনসহ তার জীবন ও কর্ম এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত পদক্ষেপের ওপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। দিনটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র চত্বরে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে একটি চিত্র প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়।
২০তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে
আগামী ১০ ও ১১ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সফল করতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাব পাঠাতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নিকট আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সভাপতির ভাষণ, সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট, অভ্যর্থনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাষণ, স্মরণিকা ও শোকপ্রস্তাব প্রস্তুতকরণের কাজ চলছে। এরই মধ্যে সম্মেলনের লোগো, ব্যাজ, কাউন্সিলর-ডেলিগেট কার্ড, পাটের সুদৃশ্য ব্যাগ, ক্যাপ ও পোস্টার ডিজাইন এবং কাউন্সিলর ও ডেলিগেট তালিকার খসড়া প্রণীত হয়েছে। সম্মেলনের একটি ‘থিম সং’ তৈরির কাজ চলছে। সম্মেলন উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবকদের টি-শার্টের ডিজাইনের কাজও প্রক্রিয়াধীন।
এরই মধ্যে সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত সবগুলো উপ-কমিটির একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে গঠিত ৯টি উপ-কমিটির এসব বৈঠকে কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এরই মধ্যে গত ২ মে দুপুর ৩টায় সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান নূর এমপির সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৩ মে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ধানমন্ডিস্থ প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারে খাদ্য উপ-কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন খাদ্য উপ-কমিটির আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপি। ৪ মে দুপুর ৩টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক ড. মো. আবদুর রাজ্জাক এমপি। ১১ মে বিকেল ৩টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্বাস্থ্য উপ-কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করবেন স্বাস্থ্য উপ-কমিটির আহ্বায়ক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। একই দিনে প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ মে সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অর্থ উপ-কমিটির সাথে অন্যান্য সব উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করবেন অর্থ উপ-কমিটির আহ্বায়ক কাজী জাফর উল্লাহ। ২৬ মে বিকেল ৫টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অভ্যর্থনা উপ-কমিটির এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এমপি।
২০তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুখপত্র মাসিক উত্তরণ বিশেষ সংখ্যা প্রকশের উদ্যোগ নিয়েছে।