শোকের চাদরে যাবে না কলঙ্ক ঢাকা

শোকের মাস আগস্ট এসেছে, বছর ঘুরে আবার এসেছে ইতিহাসের সেই কালবেলা। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় এই মাসেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘটেছিল বাঙালির ইতিহাসের সেই কলঙ্কিত অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে নরপিশাচরূপী ঘাতকচক্র। এ দিনটি মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত শোকের দিন হিসেবে পরিচিত। এই দিনটির কালিমা মোচনে আগস্ট মাসটিকে জাতি শোকের মাস হিসেবে পালন করে থাকে।

শোকাবহ আগস্টের প্রথম প্রহর থেকেই শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা শুরু হয়, মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন চলে। স্বাধীনতার স্পপতির আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে নতুন করে দেশগড়ার প্রত্যয় ঘোষিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রায় ২৫ বছর পর তারই যোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন পা রেখেছে উন্নয়নের সোপানে। মহামানব পিতার যোগ্য কন্যা এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত বেশিরভাগ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বিভিন্ন দেশে গা ঢাকা দিয়ে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিষদাঁত অনেকটাই গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আগস্টের শোকে সান্তনা খোঁজার অনেক প্রাপ্তিই জাতির সামনে আছে। তবু দানবের হাত হতে পিতাকে সুরক্ষার দায় পালনে ব্যর্থতা জাতিকে বহন করতেই হবে, শোকের শোকের চাদরে যাবে না কলঙ্ক ঢাকাচাদরে যাবে না এ কলঙ্ক ঢাকা।

বিশ্বের নিষ্ঠুরতম এ হত্যাকাণ্ডে বিপথগামী সেনা সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ন থেমে থাকেনি; একে একে হত্যা করেছে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল, মেজ ছেলে শেখ জামাল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামালকেও। ঘাতকের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ছোট্ট শিশু রাসেলও। বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসেরকেও হত্যা করে ঘাতকরা। হত্যাকাণ্ডের শিকার হন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণি ও তার স্ত্রী বেগম আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ।

খুনীরা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করে।

১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে এ বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাও বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে থাকেন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আগস্ট মাসকে আওয়ামী লীগসহ পুরো জাতি পালন করে শোকের মাস হিসেবে। ১ আগস্টের প্রথম প্রহর থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, শোক ও ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে।

১ আগস্টের প্রথম প্রহর থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্মসূচি রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। শোকের মাসের প্রথম দিন মধ্য রাত ১২টা ১ মিনিটে অর্থাৎ প্রথম প্রহরে আলোর মিছিলের মধ্য দিয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু করবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

মিছিলটি ধানমণ্ডি ৩২নং সড়ক ধরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে যাত্রা করবে। এ দিন কৃষকলীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এছাড়া ৩ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শোক দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ৪ আগস্ট বিকাল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া ৬ আগস্ট জাতীয় শ্রমিক লীগ, ১০ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই অনুষ্ঠানের সময় ও স্থান এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

এছাড়া ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও কেন্দ্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫ আগস্টের কর্মসূচিতে আছে- সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।

সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন, এ কারণে সময়সূচি সমন্বয় করতে হতে পারে। এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগরীর প্রতিটি শাখা থেকে শোক মিছিলসহ বঙ্গবন্ধু ভবনে শ্রদ্ধা নিবেদন।

সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন।

বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সুবিধামতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা। দুপুরে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ। বাদ আসর বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

এছাড়া ১৬ আগস্ট বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

অন্যদিকে ২১ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষিবিদ পরিষদ, ২২ আগস্ট বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ তাঁতী লীগ, ২৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কৃষি পরিষদ, ২৭ আগস্ট যুব মহিলা লীগ, ২৮ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষক লীগ এবং ২৯ আগস্ট মহিলা শ্রমিক লীগ, ৩০ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শোক দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

Leave a Reply

%d bloggers like this: