প্রতিবেদন

শোকের মাস আগস্ট : সমগ্র জাতির বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবার-পরিজনদের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহ গত ১ আগস্ট থেকে ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহ, জেলা-উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক সংগঠনসমূহসহ সারাদেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালা অব্যাহত রয়েছে।

মোমবাতি প্রজ্বলন ও বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের গৃহীত ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিন ভিন্নমাত্রার কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করেছেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। ১ আগস্ট প্রথম প্রহরে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। সকালে দলীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপির নেতৃত্বে টুঙ্গিপাড়ায় রওনা হন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সকল সদস্য, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য এবং মন্ত্রী-এমপিরা। দুপুরে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে প্রথমে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তারা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ফুল দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও। কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলেও অংশ নেন।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আগস্টের প্রথম দিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসভবনের সামনে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে কৃষক লীগ। আর এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধু-কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশবাসীর অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন। আলোচনা সভার পর কৃষক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানিয়ে এক ব্যাগ করে রক্তদান করেন। ২২ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষক লীগ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক শোকসভার আয়োজন করে।

তাঁতী লীগের শোকসভা
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির অংশ হিসেবে চতুর্থ দিন রাজধানীর শাহবাগে গণগ্রন্থাগার সেমিনার মিলনায়তনে সহযোগী সংগঠন তাঁতী লীগ স্মরণ সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি। আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক এনাজুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী, তাঁতী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, সাধনা দাশগুপ্ত প্রমুখ।

১০ আগস্ট বিকেলে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি বলেন, আমাদের সমাজের মানুষের অবক্ষয় হয়েছে। নইলে কীভাবে তারা নৃশংসভাবে ছোট শিশু ও ব্লগার হত্যা করতে পারে? একই সাথে একের পর এক ব্লগার হত্যা হচ্ছে। এসব হত্যার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
চিকিৎসকদের উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, শুধু স্লোগান দিলেই হবে না। আপনাদের দায়িত্ব জনগণকে সেবা দেওয়া, আপনারা জনগণকে সেবা দেবেন। শুধু স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করা যাবে না। জনগণকে সঠিকভাবে স্বাস্থ্য সেবাদানের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করতে ডাক্তারদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
স্বাচিপের সভাপতি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপির সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপি, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জমান ভূঁইয়া ডাবলু, স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সনাল প্রমুখ।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের আলোচনা সভা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় নেতা-কর্মীদের আরও বেশি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ক্ষমতার স্বাদ ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু এই যে খাই খাই করা, দলকে ও প্রধানমন্ত্রীকে খাটো করার এই অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য সে সময় এমনই পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। আর পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল বলেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছিল। আমরা যেন সেই পরিবেশ সৃষ্টি না করি।
১১ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাসভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তখন কী বাংলাদেশে বাঙালি জাতি ছিল না? আমাদের বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী কী ছিল না? আমাদের আওয়ামী লীগ কী ছিল না? এই ঘটনা যে ঘটবে তা কী আন্দাজ করা যায়নি? তিনি বলেন, এই ঘটনা ঘটল গোয়েন্দারা জানল না, পুলিশ জানল না, তার দল জানবে নাÑ এটা হতে পারে না। আমি মনে করি, এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। তারা এখনও পর্যন্ত চেষ্টায় লিপ্ত আছে যাতে সত্য উদঘাটন করা না যায়। আর এর পেছনে আছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক শক্তি।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. বিশ্বজিত ঘোষ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি প্রমুখ।

রং-তুলিতে শোকগাথা
১২ আগস্ট সকালে শুরু হয়েছিল ছবি আঁকা। বাড়ির আঙ্গিনায় পা ফেলতেই চোখ জুড়ানো সবুজ। বৃক্ষ শোভিত চত্বর। মাঝখানে বঙ্গবন্ধু ভবন। ভবনের মোটামুটি চারপাশেই ক্যানভাস পেতে বসেছিলেন শিল্পীরা। এমনকি ভবনের নিচতলার মেঝেতে সুযোগ হয়েছিল বসার। ছবি আঁকার। আর মূল ভেন্যু করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ভবনের নিচতলাটিকে। এখানে কিছু টেবিল পেতে রাখা ছিল। পাশে পছন্দের রং। সেখানে তুলি ভিজিয়ে নিয়ে চলছিল ছবি আঁকা। সব ক্যানভাস প্রায় একই মাপের। কেউ পেন্সিলে আউটলাইন টানছিলেন। কেউ তুলির টানে স্পষ্ট করছিলেন প্রিয় পিতার মুখ। ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়’। সে হৃদয়, আহা, কী ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছিল বেইমান ভাড়াটে খুনিরা! আঁকতে গিয়ে লাল তরলে ভেসে যায় ক্যানভাস। বঙ্গবন্ধুর রক্ত বাংলাদেশ হয়ে ফোটে। একটু একটু করে কথা বলছিল কালোরাত্রি। এ রাত এত কালো যে, আঁকতে গিয়ে শিল্পীর তুলি বারবার কালি শূন্য হয়। শুকিয়ে যায়। তেল রং জল রঙে আঁকা ছবি যত কথা বলে ততই যেন বাকি থেকে যায়। কিছু ছবি ফিগারেটিভ। নানা ভঙ্গিমায় ধরা দেন মুজিবুর। বারবার দেখা ছবি থেকে ছবি করেছেন শিল্পীরা। নতুন উপস্থাপনা দিয়েছেন। বিমূর্ত ভাবনা থেকেও মহান নেতাকে আঁকা হয়েছে। এ ধরনের অব্যক্ত শিল্পভাষা সৃষ্টিতে বেশ সুনাম স্পেন প্রবাসী শিল্পী মনিরুল ইসলামের। অল্প সময়ের মধ্যেই আঁকা শেষ করেন তিনি। বলেন, বঙ্গবন্ধুকে তো সারাজীবন ধরে আঁকছি। এঁকে চলেছি। যতদিন যাচ্ছে নেতা তত বিশাল হচ্ছেন। এই বিশালত্বকে পোট্রেইটে তুলে আনা মুশকিল। তাই বিমূর্ত আঁকি। বিমূর্ত থেকেছেন শিল্পী খালিদ মাহমুদ মিঠুও। তার ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা। স্বপ্নকে আঁকতে শেখ মুজিবের চশমাটিকে আশ্রয় করেছেন শিল্পী। শোকের কালো থেকে বেরিয়ে এসে আঁকা লাল চশমায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নলোক। তার দেখা স্বপ্নরা ছড়িয়ে পড়েছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলে। আঁকার ফাঁকে মিঠু বলেন, আমি নিজের স্বপ্নটা দেখি। তবে আঁকছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের নাম বাংলাদেশ। আর্ট ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন বিপাশা হায়াত। বিমূর্ত ভাবনা থেকে বঙ্গবন্ধুকে আঁকার চেষ্টা তিনিও করেছেন। বাকি শিল্পীরাও নিজেদের মতো করে এঁকেছেন। ছবি শেষ হলে তাতে স্বাক্ষর করে দেয়ালের পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। দূর থেকে দেখেছেন। হলো তো সে কথা যা বলতে চেয়েছিলাম! যেন নিজের কাছে নিজেই জানতে চেয়েছেন।
আয়োজনের শেষভাগটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ বেলায় ক্যাম্পে যোগ দেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার ও শাহাবুদ্দীন। মুস্তাফা মনোয়ার কয়েক মিনিট একটি ক্যানভাসের সামনে দাঁড়ান। পেন্সিল হাতে নেন। আউট লাইন টানেন। আর রং তুলি ব্রাশ হাতে নিতেই দৃশ্যমান হন সৌম্য শান্ত এক বঙ্গবন্ধু। আঁকা শেষ হলে শিল্পী বলেন, শেখ মুজিব বুকের গভীরে বাস করেন। তাকে বুঝে, অনেক বেশি এটেনশান দিয়ে আঁকতে হয়। একটু সময় নিয়ে আঁকতে পারলে ভালো। বঙ্গবন্ধুকে আঁকার বেলায় দু-একটি রঙের পক্ষপাত সম্পর্কে তিনি বলেন, খুব চেনা রঙের মধ্যে আটকে থাকা মানে শিল্পীর সীমাবদ্ধতা। সৃজনশীল হলে এর থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব বলে মত দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী চিত্রশিল্পীরা ছিলেন- মোস্তফা মনোয়ার, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, আবুল বারাক আলভি, আবদুল মান্নান, ফরিদা জামান, রেজাউল করিম, বীরেন সোম, মো. ইউনুস, জামাল আহমেদ, শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, মো. মনিরুজ্জামান, অশোক কর্মকার, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, সুমন অহিদ, কামাল উদ্দিন, শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, হেলাল উদ্দিন সরকার, খালিদ মাহমুদ মিঠু, আবদুস সাকুর শাহ, মনিরুল ইসলাম, সঞ্জিব দাস অপু, আলোক্তগীন তুষার, আজমির হোসেন, জাহিদ মোস্তফা, অনুকুল চন্দ্র মজুমদার, আবদুস সাত্তার, তৌফিক, নাসিম আহমেদ নাদভী, নাঈমা হক, আরাফাত, পারভেজ হাসান, রতেœস্বর সূত্রধর, রঞ্জিত দাস, কংকা, রেজাউন নবী, এএইচ ঢালী, বিপাশা হায়াত, মো. জহির উদ্দিন, উর্মি, সানজিদা আক্তার, সাফিন ওমর, নাজির খান খোকন, উজ্জ্বল ঘোষ, ময়েজ উদ্দিন, মো. তরিকত ইসলাম প্রমুখ। সব মিলিয়ে অনন্য সুন্দর একটি আয়োজন। প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এখান থেকে পাওয়া ছবি নিয়ে পরবর্তীতে বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।

যুবলীগের আলোচনা সভা
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন বিতর্কিত কাজ না করতে যুবলীগ নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এমন কোনো কর্মকা- করবেন না, যাতে ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পেয়ে যায়। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- কলঙ্কিত না হয়। ষড়যন্ত্র হবে, ষড়যন্ত্র অতীতেও হয়েছিল। কিন্তু নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ কোনো কিছু করতে পারবে না। ১২ আগস্ট রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে যুবলীগ আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, শহীদ সেরনিয়াবাত, ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরণ, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ইসমাইল হোসেন, রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ।

টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ১৪ দলের শ্রদ্ধা
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। ১২ আগস্ট দুপুরে ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপির নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতারা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় নেতৃবৃন্দ সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে নেতাকর্মীরা সেখানে ফাতেহা পাঠ ও বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া মোনাজাত করেন। বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকীর কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৪ দলের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। ১৪ দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়াকার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, কামরুল ইসলাম, জাসদ নেতা মঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি, নুরুল আম্বিয়া, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. আসিত বরন রায়, ওয়াজেদুল উসলাম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজ ভা-ারী এমপি, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়–য়া, গণতন্ত্রী পার্টির নুরুল রহমান সেলিম, ডা. শাহাদাৎ হোসেন, মাহাবুবুর রহমান, গণ আজাদী লীগের এসকে সিকদার, কাজী আলীউল ইসলাম, আতাউল্লাহ খান, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মো. ফারুক খান এমপি।
পরে তারা সমাধিসৌধের বঙ্গবন্ধু ভবনে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন। বিকেলে ১৪ দলের উদ্যোগে সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুসহ ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়।

সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে প্রদর্শনী
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে কেউ হত্যা করতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও কেউ হত্যা করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন বাঙালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর ত্যাগকে যেমনিভাবে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না, তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকেও কেউ হত্যা পারবে না, হত্যা করতে পারে নাই। ১৩ আগস্ট জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বঙ্গবন্ধুর বিরল ছবি নিয়ে তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সর্বসাধারণের জন্য এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে।

জাতীয় শোক দিবসে কোটি মানুষের বিন¤্র শ্রদ্ধা
শোকাবহ ১৫ আগস্টে শোকাচ্ছন্ন নীরবতায় থমকে গিয়েছিল গোটা দেশ। যেন শোকস্তব্ধ দেশের সব প্রান্তর। ৪০ বছর হয়ে গেল, এখনও মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে এতটুকু ভোলেনি কৃতজ্ঞ বাঙালি। বরং নতুন শপথে বলীয়ান বাঙালি জাতি ১৫ আগস্ট ৪০ বছর আগের ভয়াল এক রাতের শোকাবহ স্মৃতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। এবার শ্রদ্ধা জানাতে আসা শোকার্ত মানুষের ¯্রােত অতীতের সকল রেকর্ড ম্লান করে দেয়। শোক দিবসে সর্বত্রই উচ্চারিত হয়েছে প্রধানত ৩টি দাবি। তা হলোÑ শোককে শক্তিতে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন, পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের নেপথ্যের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচন করতে পৃথক কমিশন গঠন। এই দৃঢ় প্রত্যয় আর অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে পুরো জাতি গত ১৫ আগস্ট স্মৃতিভারাতুর হয়ে এবং বিন¤্র চিত্তে শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। নানা আনুষ্ঠানিকতায় দেশব্যাপী পালিত হয় জাতির পিতার ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। প্রাণের অর্ঘ্যে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি মানুষ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার আরও উন্নত দেশ গড়ার দৃঢ় শপথও নিয়েছেন।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ছিল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নানা শ্রেণি-পেশাসহ সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের ঢল। শহরজুড়ে দেয়ালে দেয়ালে শোকের পোস্টার। সর্বত্র শোকের তোরণ, কালো পতাকা, বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের সেই ভাষণ ও স্মৃতি জাগানিয়া গানে রাজধানীসহ পুরো দেশের পরিবেশটাই পাল্টে গিয়েছিল সেদিন। বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি দেশের সর্বত্র শোকার্ত লাখো মানুষের কণ্ঠে ছিল একই সেøাগানÑ ‘কে বলেছে মুজিব নাই, মুজিব আছে সারাবাংলায়, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফাঁসি চাই, মুজিবের বাংলায় জামায়াত-শিবির-রাজাকারের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি।
জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হয়েছে। সকালে দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শোকের কর্মসূচির সূচনা করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাদেশই যেন শোকের লাখ লাখ কালো ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারে ঢেকে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর বাসভবন এবং টুঙ্গিপাড়ার মাজারস্থল হয়ে উঠেছিল শোকার্ত লাখো মানুষের মিলন-মোহনা। দিনভর কৃতজ্ঞ বাঙালির শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার পুষ্পাঞ্জলিতে ভরে উঠেছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর জাতির পিতার প্রতিকৃতি, টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর মাজার এবং বনানীর ১৫ আগস্টের শহীদদের সমাধিস্থল।
সকাল ৬টার পর বঙ্গভবন থেকে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে পৌঁছলে তাকে অভ্যর্থনা জানান বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা। এরপর দুজনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ফুল দেওয়ার পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা, এ সময়ে বিউগলে বাজে করুণ সুর। এরপর তারা মোনাজাতে অংশ নেন। সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল বঙ্গবন্ধুকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করেন। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা জানানোর পর দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ফুল দেওয়া হয় মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ রেহানা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিজড়িত ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে ওই ভবনের যে সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে ছিল, সেখানে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন। পরে তিনি ওই ভবনের একটি কক্ষে বসে কিছু সময় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বঙ্গবন্ধুর জাদুঘর থেকে বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে বনানী কবরস্থানে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মা-ভাইসহ স্বজনদের সমাধি পাশে গিয়ে শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধুর দু-কন্যা। সেখানে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বনানীর কবরস্থানের সারিবাঁধা ১৮টি কবর। এসব কবর আর কারও নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নরপিশাচ ঘাতকচক্রের নির্মম বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে শহীদ বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শিশুপুত্র রাসেলসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের। ৪০ বছর আগে স্বজনদের চোখের জলে শেষ বিদায়টুকু দিতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর জীবিত এই দুই কন্যা।
তাই ১৫ আগস্ট সকালে মা-ভাইদের কবরে গিয়ে চোখের জল থামিয়ে রাখতে পারেননি একসাথে সব স্বজনহারা বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তারা অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় স্বজনদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে মোনাজাত ও ফাতেহা পাঠ করেন। জাতির পিতার দুই কন্যা নিজ হাতে মুঠো মুঠো ভালোবাসার ফুল ছড়িয়ে দেন প্রিয় স্বজনদের কবরে। প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও ১৮ কবরেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধুর প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে ঘাতকের গুলিতে নিহত বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলের কবরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব লে. জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদীন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি ও অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে জাতির পিতার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা জানানোর পর বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্সে দোয়া ও মোনাজাতেও অংশ নেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। বিউগলের করুণ সুরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। ফুল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নীরবে কিছুক্ষণ সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর বিশেষ মোনাজাত হয়। তখন ছোট বোন শেখ রেহানাকে পাশে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে শেখ রেহানা ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দলের সভানেত্রী হিসেবে আবার বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর একে একে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
এ ছাড়া তিন বাহিনী প্রধান, সশন্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমও বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত মিলাদে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীসহ সকলে।
বেলা সাড়ে ১০টায় মাজার কমপ্লেক্স মসজিদে মন্ত্রিপরিষদ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি ডিগ্রি কলেজ ময়দানে প্রায় ২৮ হাজার মুসলিম ও বালাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ৮ হাজার মানুষের জন্য আয়োজন করা হয় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান।
জাতীয় শোক দিবসে শুধু রাজনৈতিক দল বা সংগঠনই নয়, সারাদেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ, সংগঠন এবার বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করেছে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে। এদিন গোটা দেশই যেন ভেসেছে শোকের সাগরে। দিনব্যাপী সর্বত্র মাইকে প্রচারিত হচ্ছিল কোরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বজ্রনির্ঘোষ ভাষণ এবং ফাঁকে ফাঁকে অবিরাম দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া গান। রাষ্ট্রাচার শেষে উন্মুক্ত হওয়ার পর দিনভর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিকসহ অজ¯্র সংগঠন ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে।
এ ছাড়া এবার জাতীয় শোক দিবসে দলীয় আয়োজনকে বহুগুণে ছাপিয়ে গিয়েছিল গণমানুষের অংশগ্রহণ। সারাদেশের প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায়, সড়কের পাশ দিয়ে যেতে চোখে পড়েছে খানিক পরপরই কালো ব্যানার, কালো পতাকা উড়িয়ে মিলাদ মাহফিল, দোয়াখায়ের ও দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণপর্ব। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, জাতীয় শোক দিবসের সাথে তাৎপর্যপূর্ণ কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হামদ ও নাত প্রতিযোগিতা ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় ঢাকাসহ সব জেলা সদরে ও ৪টি পার্বত্য উপজেলায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত প্রমাণ্যচিত্র দেখানো হয়। বাদ জুমা সারাদেশে সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা অংশ নেন। ছাত্রলীগ সব সরকারি মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে। সরকারিভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব মেডিকেল কলেজে ফ্রি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকীতে তার আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেছেন বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সমাজের আয়োজনে সর্বধর্ম এই প্রার্থনা সভা হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ১৫ আগস্ট নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রার্থনাসভা হয়। তেজগাঁও হলি রোজারিও চার্চে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ইসলামি ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি ও তথ্য গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপন
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে তার প্রতিকৃতি স্থাপন করা হলো। মহান এই নেতার প্রতিকৃতি স্থাপনের জন্য দীর্ঘকাল ধরে চেষ্টা করেও তার প্রতিকৃতি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন প্রেসক্লাব স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি দখল করে রেখেছিল। তাদের বাধার কারণে দীর্ঘ ৪৪ বছর জাতির পিতার প্রতিকৃতি প্রেসক্লাবে স্থান পায়নি। এবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও বিএনপির উদারমনা নেতৃবৃন্দ জাতির মহান নেতাকে মর্যাদার উচ্চ আসনে নিয়ে আসেন।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সকাল ৯টায় জাতির পিতার প্রতিকৃতি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করা হয়। প্রতিকৃতি স্থাপনের পর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে এবং ডিইউজে নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। জাতির পিতার প্রতিকৃতি স্থাপন অনুষ্ঠানে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মানুষের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত : শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সুখী-সমৃদ্ধ, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমি প্রস্তুত। যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, আমি তাতে পরোয়া করি না। জীবন দেওয়ার ও কেড়ে নেওয়ার মালিক আল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া আমি কাউকে ভয় পাই না। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে কোনোদিন মাথানত করিনি, করবও না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু রক্ত দিয়ে বাংলার মানুষের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই আরাধ্য কাজ ও স্বপ্ন যে কোনো মূল্যে সফল করতেই হবে। বাঙালি জাতির ভাগ্য আমাদের পরিবর্তন করতেই হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। ১৬ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে অনেক ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। মা-বাবা, ভাইসহ সবাইকে হারিয়েছি। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমার একটাই লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে যে বাঙালি জাতির মাথা হেঁট করে দেওয়া হয়েছিল, সেই বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড় করানো। দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবেÑ এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, এমএ আজিজ, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপি, মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, আহমদ হোসেন ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি। ড. হাছান মাহমুদ এমপি ও অসীম কুমার উকিলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর স্মরণে কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার শিমুল মোস্তফা।
প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগস্টের ভয়াল হত্যাযজ্ঞ এবং পরবর্তী হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ’৭৫-এর পর দেশকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশের ইতিহাসে নেই যে, খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ও পুরস্কৃত করা হয়। কিন্তু এ দেশে তাই হয়েছে। ’৭৫-পরবর্তী জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার তাই করেছে। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনি, নারী-শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যাকারীদের বিচার করেছি, বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি।

বিএসএমএমইউ-তে আলোচনা সভা
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে দিতে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় আংশিক কার্যকর হয়েছে। কিছু খুনি এখনও দেশের বাইরে পলাতক রয়েছে। যেসব দেশে এসব খুনি পালিয়ে রয়েছে, সেই রাষ্ট্রগুলোর প্রতি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের জন্য বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
১৬ আগস্ট দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই আলোচনা সভা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের সভাপতিত্বে সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি, সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জমান ভূঁইয়া ডাবলু, বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সনাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বিশেষ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন : ১৬ আগস্ট সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিশেষ সেবা সপ্তাহের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ১৫ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত এই সেবা দেওয়া হয়। এ সময় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়–য়া, বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলা একাডেমি
একক বক্তৃতা : বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সূচনাপর্বই ছিল ঘটনাবহুল। প্রথমে বিপ্লবী দলের প্রতি ছিল তার সম্মোহন এবং পরবর্তীতে সুভাষ বসুর রাজনৈতিক পন্থার প্রতি আগ্রহ ক্রমান্বয়ে মোড় নিয়েছে বাংলা ও বাঙালিকে ঘিরে স্বতন্ত্র-স্বাধীন কর্মপন্থায়। ১৯৪৮ সালে ভাষা সংগ্রামের প্রথম পর্যায় থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ গঠন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে বাঙালির মুক্তির দাবি সংযোজনের সংগ্রাম, সামরিক শাসন প্রত্যাহারের আন্দোলন, ঐতিহাসিক ৬-দফা উত্থাপন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, বঙ্গবন্ধু উপাধি লাভ, সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়, একাত্তরের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ইত্যাদি সকল কর্মপ্রবাহে আমরা দেখব নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে সব সময় বাঙালির জাতির সার্বিক মুক্তির পথকে প্রশস্ত করতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১ আগস্ট বাংলা একাডেমি আয়োজিত একক বক্তৃতায় এসব কথা বলেছেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমির পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে এই বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। ১ আগস্ট বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু স্মরণে একক বক্তৃতা। বঙ্গবন্ধু এবং ১৫ আগস্টের সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং শিল্পী পাপিয়া সারোয়ারের কণ্ঠে ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু’ সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি এবং ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী।
আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি গোষ্ঠী বা দলের নন, তিনি সর্বজনীন। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু দিনে দিনে বঙ্গবন্ধু আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলবে এমন শক্তি পৃথিবীতে নেই।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৮ আগস্ট বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বাংলা একাডেমি আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন এবং বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলা একাডেমি আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানে সৈয়দ আশরাফ বলেন, শোক দিবসের আগে সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী সবার প্রতি আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম, এবারে শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য। আমরা যতটা না আশা করেছিলাম তার চেয়েও এবারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখেছি মানুষের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন। তিনি এখন আর কোনো দলে বা গোষ্ঠীতে নেই। প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানে রেকর্ড সংখ্যক দর্শক উপস্থিত ছিলেন। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশে মানুষ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন করে জানতে শুরু করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন ইতিহাসের ¯্রষ্টা। এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কর্মপরিচয় উঠে এসেছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি প্রমুখ। পরে ড. মুহাম্মদ এনামুল হক ভবনে নভেরা ভাস্কর্য ঘুরে দেখেন সৈয়দ আশরাফ।

শ্রমিক লীগের আলোচনা সভা
১৮ আগস্ট শ্রমিক লীগের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কে বলে বঙ্গবন্ধু নেই? এখনও তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। তিনি এখনও জীবিত। আমাদের হৃদয় থেকে তিনি মরেননি। বাংলাদেশের মতো যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনা বিশ্বে বিরল উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসেনি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে হয়েছে। শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শ্রমিক লীগের ফজলুল হক মন্টু, সিরাজুল ইসলামসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আলোচনা সভা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে এতদিন দলীয় গ-ির মধ্যে রেখে তার প্রতি আমরা (আওয়ামী লীগ) অবিচার করেছি। কেননা বঙ্গবন্ধু কেবল আওয়ামী লীগের নেতা নন, তিনি জাতির নেতা। এ উপলব্ধি গোটা জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে যদি কোটারির মধ্যে রাখি, তা হবে জাতির জন্য হতাশাজনক।
১৯ আগস্ট সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিচারপতি এএফএম মেসবাহউদ্দীনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম এমপি, পরিষদের মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান প্রমুখ।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, এবার বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী সর্বজনীনভাবেই পালিত হয়েছে। ওই দিন ধানমন্ডির স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বরে মানুষের যে ঢল নেমেছিল, গত ১০ বছরেও তা দেখা যায়নি। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশেই মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ’৭০-এর নির্বাচনের দুটি ঘটনা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারে নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহে ফিরছিলেন। এ সময় কিছু মানুষ রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বঙ্গবন্ধু এ সময় একা গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে কিছু হয়েছে কি-না তা দেখতে যান। বঙ্গবন্ধুকে আসতে দেখে যারা আগুন লাগিয়েছিল তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ময়মনসিংহ সার্কিট হাউসে গিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে বঙ্গবন্ধু যে ভাষায় জবাবদিহি চেয়েছিলেন, তা দেখে আমরাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে কখনও কাউকে পরোয়া করেননি।

বঙ্গবন্ধুকে সর্বজনীন করতে চাই
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কোনো দল কিংবা গোষ্ঠীর কোটারির মধ্যে না রেখে তাকে সর্বজনীন করার কথা বলেছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি। তিনি বলেছেন, এবারের শোক দিবসের মূল স্লোগান ছিল বঙ্গবন্ধুকে সর্বজনীন করা। ২০ আগস্ট রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনায় সৈয়দ আশরাফ এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে শোক দিবসের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি ওনাকে বললাম, আমরা বঙ্গবন্ধুকে সর্বজনীন করতে চাই। বঙ্গবন্ধু একটা রাজনৈতিক দল, একটা গোষ্ঠীর কোটারিতে থাকবেন কেন? তিনি তো জাতির পিতা। তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। আমরা চাই যে বঙ্গবন্ধু শুধু আমাদের স্বার্থের জন্য, তাকে আমাদের সাথে রাখা সঠিক মনে করি না। বঙ্গবন্ধু সারাবাংলার প্রতিটি মানুষের পিতা, জাতির পিতা। তাকে কোনো কম্পার্টমেন্টে, কোনো গ্রুপের সাথে মেশানো সম্ভব না। সুতরাং, আমরা চাই এবারের শোক দিবস সর্বজনীন করার জন্য।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, এবারের শোক দিবসের মূল স্লোগান ছিল বঙ্গবন্ধুকে সর্বজনীন করা। আমরা দেখতে চাই, এ দেশের সব মানুষ, সব দলের মানুষ, সব মতের মানুষ শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করবে। তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। সেখানেই হবে বঙ্গবন্ধুর আসল জয়। বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সভাপতি আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, আবদুল মান্নান এমপি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান প্রমুখ।

মহিলা শ্রমিক লীগ
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি বলেছেন, আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক ও তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়েছে। এবার সব আওয়ামী আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলের বলেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ না থাকায় গত দুই দফা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে হেরে গেছি। কিন্তু এবার নিরঙ্কুশ জয় হয়েছে। ২৯ আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগ এ সভার আয়োজন করে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, মহিলা ও শিশু প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, আওয়ামী লীগ শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, জাতীয় শ্রমিক লীগের শুক্কুর মাহমুদ, সিরাজুল ইসলাম, ফজলুল হক মন্টু, সংগঠনের সুরাইয়া আক্তার, সামছুন্নাহার ভুইয়া প্রমুখ।

শোক র‌্যালিতে লাখো মানুষ
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর স্মৃতিবিজড়িত বঙ্গবন্ধুর বাসভবন। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার পথই যেন পরিণত হয়েছিল শোক মিছিলে। হাতে কালো পতাকা, পরনে কালো গেঞ্জি, মাথা ও হাতে কালো ব্যান্ড আর হাতে কালো ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সম্পূর্ণ শোকের আবহে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে ৩০ আগস্ট রাজধানীতে বিশাল শোক মিছিল করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ৪০ দিনব্যাপী শোকের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি পর্যন্ত এই শোক শোভাযাত্রাটি হয়। সুদীর্ঘ পথ হেঁটেই দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী শোক মিছিলে অংশ নিয়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সুবিশাল এই শোক মিছিল থেকে বিএনপি-জামাতসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে থেকে শোক মিছিলটি শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, কলাবাগান, শুক্রাবাদ, রাসেল স্কয়ার হয়ে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে গিয়ে শেষ হয়। শোক র‌্যালি শেষে নেতাকর্মীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজের সভাপতিত্বে শোক মিছিলপূর্ব সমাবেশে মতিয়া চৌধুরী এমপি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম এমপি, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।

ছাত্রলীগের শোক দিবসের আলোচনা সভা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য। উপমহাদেশে ছাত্রলীগের ঐতিহ্য, অর্জন অনেক। ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৩১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছাত্রলীগ আয়োজিত শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে জমিতে আগাছা আছে সে জমিতে ফসল হয় না। আগাছা তুলে ফেলতে হয়। আগাছা তুলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কর্মী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *