প্রতিবেদন

সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হলেন সংসদ সদস্য লিটন

গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনকে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এমপির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও তার কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার অনিল সাহা ও নিকট আত্মীয় (স্ত্রীর বড় ভাই) বেতার জানান, সন্ধ্যে পৌনে ৬টায় সংসদ সদস্য লিটন তার দ্বিতল বাসভবনের নিচতলার বৈঠকখানায় বসে কতিপয় দলীয় কর্মীর সাথে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এ সময় তিন যুবক হেলমেট পরা অবস্থায় একটি মোটরসাইকেলে করে তার বাসার সামনে আসে। তাদের একজন বাইরের আঙিনায় ‘স্টার্ট’ দেওয়া মোটরসাইকেলে বসে অবস্থান করছিল। অন্য দুজন এমপি লিটনের সাথে কথা বলার অজুহাতে ঘরের ভেতরে ঢুকে তাকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে আকস্মিকভাবে গুলি ছোড়ে। এরপরই তারা দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়।
মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসারের সর্বকনিষ্ঠ ছেলে লিটন একটু ডানপিটে স্বভাবের ছোটবেলা থেকেই। তার পিতা মরহুম আশরাফ আলী সরকার পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। মরহুম আশরাফ আলী সরকার ১৯৫০ সালে সুন্দরগঞ্জ থানা আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। পীরগাছা কলেজে পড়াকালীন সময়ে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। লিটনকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তার পরিবার তাকে এইচএসসি পাসের পরেই সুইডেনে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য পাঠান। স্বৈরাচার এরশাদ হটাও আন্দোলন, ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা মার্কা নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলন সর্বোপরি সুন্দরগঞ্জে রাজাকার শিরোমণি গোলাম আজম ঠেকাও আন্দোলন ও প্রতিরোধে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন তরুণ রাজনৈতিক লিটন। ২০০৪ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জঙ্গিবাদ ও জামাত-শিবিরবিরোধী অবস্থান নেওয়ায় তিনি একটি মহলের রোষাণলে পড়েন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন, ওই কারণে তিনি মৌলবাদী চক্রের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের খুনিদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এক শোক বিবৃতিতে লিটনের মৃত্যুকে শোক প্রকাশ করে স্থানীয় জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত দল এই খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনসহ খুনিদের গ্রেফতারে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও সদস্যরা বিভিন্ন পর্যায়ের ৪০ জনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। খুব শিগগিরই খুনের প্রকৃত তথ্য জানা যাবে এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
এলাকায় শান্তি নিশ্চিত করেছিল বলেই
জীবন দিতে হলো : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, গাইবান্ধার সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি-জামাত জোটের ভয়াল তা-ব ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকেও তার এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়নি। এটাই ছিল এমপি লিটনের বড় অপরাধ। অগ্নিসন্ত্রাস রুখে দিয়ে এলাকার মানুষের শান্তি ও স্বস্তি নিশ্চিত করেছিল বলেই হয়তো তাকে এভাবে অকালে জীবন দিতে হলো। আমরা জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে কঠোর অবস্থা নিয়েছি, তেমনিভাবে অবশ্যই লিটন হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। খুনিরা কেউই রেহাই পাবে না।
গত ২২ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনের সূচনা দিনে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
হত্যাকারীদের আড়াল করা যাবে না : ওবায়দুল কাদের
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, যারা বিভ্রান্তির কুয়াশা সৃষ্টি করে এমপি লিটন হত্যাকারীদের আড়াল করতে চায় তাদের এই উদ্দেশ্য সফল হবে না। হত্যাকারী যে-ই হোক যত প্রভাবশালীই হোক তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনতে সরকার সংকল্পবদ্ধ।
আততায়ীর গুলিতে নিহত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন স্মরণে গত ২৮ জানুয়ারি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ডিডব্লিউ ডিগ্রি কলেজ মাঠে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহম্মেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নাগরিক কমিটি আয়োজিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। মন্ত্রী আরও বলেন, লিটন হত্যাকা-ের পরিকল্পনা কারা করেছে, কে হত্যা করেছে, এত কিছু বুঝি নাÑ এটা বুঝি যে, লিটনের হত্যার বিচার হতেই হবে।
নাগরিক শোকসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপি, রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি প্রমুখ।

প্রতিবেদন : সরদার মাহামুদ হাসান রুবেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *