সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঢাকার জিরো টলারেন্স
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সৌদি আরব যে উদ্যোগ নিচ্ছে তার সাথে থাকার এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন আহমেদ আল জুবেইর গত ৮ মার্চ ঝটিকা সফরে ঢাকায় এসে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে তাকে এই আশ্বাস দেন। শেখ হাসিনা এ সময় সন্ত্রাসের ব্যাপারে বাংলাদেশের ছাড় না দেওয়ার জোরাল নীতির কথাও তুলে ধরেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে বৈঠক করেন। তিনি ঢাকা ছাড়েন রাত সাড়ে ৯টায়। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার ঝটিকা সফরে বাংলাদেশে এসে এদেশের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্কের নতুন উচ্চতায় পৌঁছার বিশেষ বার্তা দিয়ে গেছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশে কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের সময় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটিই প্রথম সফর। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবিরোধী জোটে যোগ দেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক আরও জোরাল হয়েছে।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে অবহিত করেন। ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী ও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্মীদের অভিবাসন, বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস নির্মূলে সৌদি আরব যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে বাংলাদেশ সহযোগিতা করবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঢাকা সব সময় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সৌদি আরবের সাথে বন্ধুত্বকে বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ হিসেবে উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘ ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধ করায় সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে দেশটির সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে আরও বেশি সৌদি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মের নামে কিছু লোক ইসলামের বদনাম করছে, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছেÑ যা মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছে। অথচ ইসলাম শান্তির ধর্ম। প্রধানমন্ত্রী সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলাপকালে মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন করার কথাও বলেন। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ভালোবাসা, শান্তি ও ক্ষমার শিক্ষা দেয়। অথচ সন্ত্রাসীরা ইসলামের মূল্যবোধকে অবজ্ঞা করছে। সন্ত্রাসী ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি গণমাধ্যমের ভূমিকা গ্রহণ জরুরি বলেও তিনি জানান। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশংসা করেন। তিনি আশা করেন, আগামী বছরগুলোতে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরাল হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ছিলেন সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ড. খালিদ বিন জানদান ও ড. ইউসেফ আল সাদুন, মহাপরিচালক মোহাম্মদ আল কালাবি, পরিচালক ওসামা নাগলি ও খালিদ আল কানাগরি, বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচএম আল-মুতাইরি। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।