সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতিদান দেব
স্বাধীনতা পদক প্রদানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সমাজের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সব বাধা উপেক্ষা করেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তুলে লাখো শহীদের আত্মত্যাগের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে সমর্থ হব। কেউ আমাদের অগ্রগতিকে রুখতে পারবে না।
গত ২৪ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পদক ২০১৬ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে গৌরবময় ও অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদক ২০১৬-তে ভূষিত করেন। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে প্রধানমন্ত্রী ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি পদক, ৩ লাখ টাকা ও একটি সম্মাননাপত্র প্রদান করেন। সাতজন মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাদের সহধর্মিণী, সন্তান এবং পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন।
দেশকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত করে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করব। এদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রতিটি মানুষ চিকিৎসা পাবে। না খেয়ে কেউই থাকবে না। শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এদেশ আমরা পেয়েছি লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এজন্য দেশকে গড়ে তোলা আমাদের কর্তব্য।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। যে সংগঠন জাতির পিতার নেতৃত্বে দেশের মানুষকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে বিজয় অর্জন করেছে। কাজেই আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখন থেকেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের উদ্দেশে বলেন, আজ আপনারা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা সম্মাননা পেলেন আমি আশা করি আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে আগামী প্রজন্ম। সেজন্য আগামী দিনেও সেভাবেই কাজ করবেন। তিনি বলেন, পদক পাওয়ার জন্য কেউ কাজ করে না। তবে, আপনাদের এই পদকপ্রাপ্তি আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
স্বাধীনতা পদক পেলেন যারা
এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে কাজ করার সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কাজ করতে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগকারী ও মুক্তিযুদ্ধকালে বিদেশে জনমত সংগঠনের জন্য সংগঠক হিসেবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এম ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, সফল রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী মরহুম মৌলভী আজমত আলী খান (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশের বিমানবাহিনীর প্রথম ইউনিট ‘কিলো ফাইট’র সক্রিয় সদস্য, দেশের বিমান বাহিনী গঠন প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা পালনকারী এফ-৬ সুপারসনিক বিমানের পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) বদরুল আলম বীরোত্তম। ১৯৭১ সালে রাজশাহী পুলিশ লাইনে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হামলার প্রতিরোধে পুলিশ বাহিনী গঠনকারী রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার শহীদ শাহ আবদুল মজিদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে নেতৃত্বদানকালে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হাতে শাহাদাতবরণকারী রাঙ্গামাটির মহকুমা প্রশাসক এম আবদুল আলী (মরণোত্তর), বাংলাদেশের সংবিধান লিপিবদ্ধকারী ও লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগকারী বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মরহুম একেএম আবদুর রউফ (মরণোত্তর), ১৯৭১ সালে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগকারী ও দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রথম মিশন প্রতিষ্ঠাকারী মরহুম কেএম শিহাব উদ্দিন (মরণোত্তর) এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সাংস্কৃতিক কর্মকা- সংগঠনে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক সৈয়দ হাসান ইমাম।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য মরহুম রফিকুল ইসলাম (মরণোত্তর) ও আবদুস সালাম পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে আরও রয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তোষা ও স্থানীয় জাতের পাটের জেনোম সিকুয়েন্স এবং উদ্ভিদের ক্ষতিকর ছত্রাক ম্যাক্রোফমিনা ফ্যাসিওলিনার জীবন রহস্য আবিষ্কারের জন্য কৃষি গবেষক মরহুম অধ্যাপক মাকসুদুল আলম (মরণোত্তর) এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ রাফি খান (এমআর খান)। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কবি নির্মলেন্দু গুণ এবং রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও গবেষক রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান এবং দেশের সমুদ্রসীমার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় নিরলস প্রয়াস চালানোর জন্য বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়। নৌ-বাহিনীর পক্ষে ভাইস অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং অন্যরা স্ব স্ব পুরস্কার গ্রহণ করেন।