সারাদেশে এক আওয়াজ রুখে দাঁড়াও জঙ্গিবাদ মানববন্ধনে লাখো মানুষের ঢল
‘গুপ্তহত্যাকারী, জঙ্গি ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদতদাতা বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ আজ জেগে উঠেছে। বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সারাদেশে যে গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে কেউ তা থামাতে পারবে না।’
উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রখর রৌদ্র উপেক্ষা করে গাবতলী থেকে সায়েদাবাদ দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার পথে লাখো মানুষের ঢল নামিয়ে চলমান গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের রাজনৈতিক শক্তির মহড়া দেখাল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। শুধু ঢাকায় নয়, গত ১৯ জুন সারাদেশেই একসাথে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বিএনপি-জামাত জোটসহ সকল অপশক্তির চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলারও ঘোষণা দিয়েছে ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ।
রাজধানীতে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় শীর্ষনেতারা বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে চরম হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, গুপ্তহত্যাকারী, জঙ্গি ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদতদাতা বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ আজ জেগে উঠেছে। বিএনপি-জামাতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সারাদেশে যে গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে কেউ তা থামাতে পারবে না। গুপ্তহত্যা ও খুনিদের অস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী যে বাংলার জনগণÑ মানববন্ধনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ঢলে আবারও তা প্রমাণিত হয়েছে। খালেদা জিয়ারা এসব দেশবিরোধী ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বন্ধ না করলে দেশবাসীই তার দাঁতভাঙা জবাব দেবে।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে দেশব্যাপী গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে আগামী ১৫ থেকে ২১ জুলাই ‘গণপ্রতিরোধ সপ্তাহ’ পালনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এমপি বলেন, গুপ্তহত্যাকারীদের চেয়ে শক্তিশালী হলো বাংলার জনগণ। দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে তারা সেটি দেখিয়ে দিয়েছে। আগামী ১৫ থেকে ১৯ জুলাই দেশব্যাপী প্রতিরোধ সপ্তাহ পালন করা হবে। ওই প্রতিরোধ সপ্তাহে আমরা গ্রাম থেকে গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায় গিয়ে গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করব। দেশবাসীকে সাথে নিয়ে জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলব।
সারাদেশে গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও জঙ্গিবাদের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের উদ্যোগে ১৯ জুন বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে এই মানবপ্রাচীরের সূচনা। সেখান থেকে শ্যামলী, আসাদগেট, কলাবাগান, রাসেল স্কোয়ার, বসুন্ধরা মার্কেট, সোনারগাঁও হোটেল মোড় হয়ে শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে হয়ে মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন মোড় হয়ে নূর হোসেন স্কোয়ার, গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কোয়ার থেকে পার্কের ভেতর হয়ে ইত্তেফাক মোড়, রাজধানী সুপার মার্কেট হয়ে সায়েদাবাদ হয়ে যাত্রাবাড়ী গিয়ে এই মানবপ্রাচীর শেষ হয়।
আর এই দীর্ঘপথের বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মানবপ্রাচীর কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। ঢাকা মহানগরীর প্রায় ১০০টি থানা থেকে গুপ্তহত্যাকারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহতের দাবিতে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে অজ¯্র মিছিল নির্দিষ্ট করে দেওয়া স্থানে এসে গড়ে তোলে এই মানবপ্রাচীর। শুধু ১৪ দলের নেতাকর্মীই নয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অজ¯্র সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনও মানববন্ধনে অংশ নিয়ে গুপ্তহত্যাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি ঘৃণা জানায়। তবে এই মানববন্ধনের কারণে ঢাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট শ্যামলী এলাকায় যানজটে পড়ে দীর্ঘ সময় গাড়ি আটকেছিল। এতে নগরবাসীকে কিছুটা ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সামনে মানববন্ধনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেনÑ কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার এমপি, জাতীয় পার্টির (জেপি) শেখ শহীদুল ইসলাম, জাসদের (ইনু) শিরিন আক্তার, আওয়ামী লীগের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, মৃণাল কান্তি দাস এমপি, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নুরুর রহমান সেলিম, ডা. শহিদুল্লাহ সিকদার, ডা. শাহাদাৎ হোসেন, এসকে সিকদার, রেজাউর রশিদ খান, অসীত বরণ রায়, মহানগর আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত প্রমুখ।
জঙ্গিবাদ বিতাড়িত করতে অ্যাকশন কর্মসূচিÑ ওবায়দুল কাদের : শ্যামলী থেকে আসাদগেট পর্যন্ত দীর্ঘ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা তলে তলে বড় ধরনের আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই শুধু মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দিয়ে তাদের প্রতিহত করা সম্ভব হবে না। তাদের চিরতরে এদেশ থেকে বিতাড়িত ও নির্মূল করতে হলে অ্যাকশনধর্মী কর্মসূচি নেওয়া উচিত।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি বলেন, এই কর্মসূচিতে দেশবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে জানান দিচ্ছে জাতি হিসেবে আমরা সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। আর ১৪ দল আমরা রাজনৈতিকভাব জানান দিচ্ছি, আমরা এই গুপ্তহত্যা, জঙ্গিবাদকে প্রতিহত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এর মাধ্যমে সকল অশুভ শক্তি সতর্ক হবে। কর্মসূচিতে আরও অংশ নেনÑ দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, খালেদা তারেক তৃপ্তি প্রমুখ।
এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন প্রমুখ বক্তব্য দেন। একই স্থানে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট এলায়েন্সের (বিএনএ) আহ্বায়ক ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন জোটের নেতারা অংশ নেন। সায়েদাবাদ জনপথের মোড় ও যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন কাজী মনিরুল ইসলাম মনু। রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে যুবলীগ। ইসমাইল চৌধুরী স¤্রাটের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেনÑ যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ প্রমুখ। অন্যদিকে গাবতলী থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত দীর্ঘ মানববন্ধন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগসহ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা নেতৃত্ব দেন।
শাহবাগে চিকিৎসকদের মানববন্ধন : ১৪ দল আহূত মানববন্ধন কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, অফিসার, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন গড়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানের নেতৃত্বে কর্মসূচিতে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. আলী আসগর মোড়ল, অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল হান্নান, অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল, অধ্যাপক ডা. একেএম সালেহসহ বিপুলসংখ্যক চিকিৎসক অংশ নেন এবং চলমান গুপ্তহত্যার কঠোর সমালোচনা করেন।
১৪ দল ঘোষিত সারাদেশে সন্ত্রাস ও গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে গাবতলীতে মানববন্ধনের সূচনা পয়েন্টে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জননেতা নূহ-উল-আলম লেনিন ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি প্রমুখ। গাবতলী ও কল্যাণপুর পয়েন্টে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) হাফিজুল ইসলাম, আসলামুল হক এমপি, সাবিনা আক্তার তুহিন এমপিসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
রায়হান কবির