১৯৭১ সালের এই দিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড
১৯৭১ সালের এই দিনে (২৭ নভেম্বর) শৈলকূপা উপজেলার কামান্না গ্রামে পাকহানাদাররা নির্বিচার ও নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল মুক্তিপাগল ২৭ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। ২৭ নভেম্বর রাতের প্রথম প্রহরে এদেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকার ও আলশামসরা রক্তের বন্যা বইয়ে দেয় এই কামান্না গ্রামে। ৭১-এর ২৩ নভেম্বর ৪২ জনের একদল চৌকস রণকৌশলী মুক্তিযোদ্ধা প্রশিণ শেষে ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করেন এবং উপজেলার কামান্না গ্রামের মাধব চন্দ্রের বাড়িতে যুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক অবস্থান গ্রহণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর থানা এলাকায় ও বাকিদের শৈলকূপায়। উপজেলার মালিথিয়া গ্রামের আলমগীর ও শ্রীপুরের আবু বকর ছিলেন এদের দলনায়ক। মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতির সংবাদ স্থানীয় রাজাকার, আলবদরদের তৎপতায় দ্র“ত চলে যায় ঝিনাইদহ ও মাগুরায় অবস্থিত পাকহানাদার ক্যাম্পে। হানাদাররা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঝিনাইদহ ও মাগুরার দুদিক থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রাতের আঁধারে পৌঁছে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের খুব কাছাকাছি। একটু দূরে তাদের গাড়িগুলো রেখে পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে হঠাৎ করেই ভারী গোলা ছোড়ে। আকস্মিক এ আক্রমণে মুক্তিসেনারা হকচকিয়ে যান। একপর্যায়ে মুক্তিসেনারা নিজেদের সামলে নিয়ে শক্ত হাতে তুলে নেন হাতিয়ার। তারাও আক্রমণ চালান। কিন্তু আকস্মিকভাবে ঝটিকা আক্রমণ করায় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সামনে বেশিণ টিকতে পারেননি। তখন তারা পিছু হটতে বাধ্য হন। কিন্তু সবাই নিজেকে রা করতে সম হননি। ঘরের মাঝে আটকা পড়ে যান অনেকে। নরখাদকরা তাদের গুলি করে হত্যা করে। শুধু তাদেরই নয়, নরপশুরা গ্রামটিতেও আগুন ধরিয়ে দেয়। এই গ্রামের সহযোগী ফণিভূষণ কুণ্ডু ও রঙ্গবিবিকে গুলি করে হত্যা করে। তাদের বিপ্তি এলোপাতাড়ি গুলিতে গ্রামের অনেক বাসিন্দাও আহত হন। পৈশাচিক এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ভোরের আগেই তারা উল্লাস করতে করতে সে স্থান ত্যাগ করে। ওই দিন ২৭ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হানাদাররা স্থান ত্যাগ করার পরপরই আশপাশের গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার জনতা এসে জড়ো হয়। ঘরের মেঝে, উঠান ও বাড়ির আঙিনায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল শহীদদের তবিত নি®প্রাণ দেহ। সব লাশ জড়ো করা হয় এক জায়গায়। তড়িঘড়ি করে কামান্না হাইস্কুলের খেলার মাঠের উত্তর পাশে কুমার নদ ঘেঁষে ৬ জন করে দুটি ও ৫ জন করে তিনটি কবরে ২৭ বীর সন্তানকে কবর দেয়া হয়। কুমার নদের ধারে সেই ২৭ বীর শহীদের কবর ঘেঁষে নির্মিত হয়েছে একটি শহীদ মিনার, যার গায়ে লেখা রয়েছে ২৭ বীর শহীদের নাম। তারা হলেন : মোমিন, কাদের, শহীদুল, ছলেমান, রাজ্জাক, ওয়াহেদ, রিয়াদ, আলমগীর, মতালেব, আলী হোসেন, শরিফুল, আলীমুজ্জামান, আনিসুর রহমান, তাজুল, মনিরুজ্জামান, নাসিম, রাজ্জাক-২, কউসার, সালেক, আজিজ, আকবর, সেলিম, হোসেন, রাশেদ, গোলজার, অধির ও গৌর।